মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

ইলাইজা ইম্পে [Sir Impay Elijah]


ইলাইজা ইম্পে [Sir Impay Elijah]
জন্ম নেন ১৭৩২ সালেতাঁকে পাঠানো হয়েছিল ভারতের সুপ্রীপ কোর্টের বিচারপতি করেনিম্ন আদালত থেকে আসা বিচারগুলো তাঁর কাছে এসেই শেষ হত অবিলম্বেসুতরাং ভারতের বৃটিশ বিরোধী ব্যক্তি বা বিপ্লবীদের, বিশেষ করে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা আছে এই রকম আসামীদের, কেমন করে যাবজ্জীবন ও ফাঁসি দেওয়া যায় সে বিষয়ে তিনি ছিলেন অভিজ্ঞ বিচারকঅনেক ফাঁসির রায়প্রাপ্ত আসামীকে বাহ্যতঃ করুণা প্রদর্শন করে যাবজ্জীবনের কারাদন্ড দিতেনঅবশ্য কারাগারে তাদের মৃত্যুই ঘটানো হতো আর রটিয়ে দেয়া হতো হৃদরোগের মৃত্যু বলে১৭৭৫ খৃষ্টাব্দে মহারাজ নন্দকুমারকে জালিয়াতির অভিযোগে ফাঁসির দন্ড দিয়েছিলেন ঐ বিচারপতি মিঃ ইম্পেঅথচ সত্যিকথা এটাই, যে অভিযোগের তাঁর ফাঁসি হয়েছিল সেই অভিযোগটি ছিল মিথ্যাঐ ব্রাহ্মণ নন্দকুমারের ফাঁসির পর বহু হিন্দুর ইংরেজ প্রীতিতে ভাটা সৃষ্টি হয়বিলেত থেকে খবর এল তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হবে, তাঁর বিচার হবে সেখানেআমাদের ভারতের রাজা, মাহারাজা, জমিদার, এমনকি অনেক আশ্রমের সাধুজীরা বিলেতে গাদাগাদা চিঠি লিখলেন যাতে ন্যায়াধিরাজ মহান বিচারপতির শাস্তি না হয়আর তাই ইংরেজ শাসক মিঃ ইম্পেকে ভূষিত করেছিলেন স্যারউপাধিতে১৮০৯ খৃষ্টাব্দে তিনি বিদায় নেন পৃথিবী থেকে

অয়ারেন হেস্টিংস [Warren Hastings]

অয়ারেন হেস্টিংস [Warren Hastings]
১৭৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি তাঁকেও শাসন শোষণের ট্রেনিং দিয়ে ভারত বর্ষে পাঠানো হয়েছিল ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কেরানী করে এখানে এসে তিনি দানবীয় পদ্ধতিতে ভারতবাসীর উপর অত্যাচারের রোলার চালান।এবং এভাবেই তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা বৃটিশ সরকারকে মুগ্ধ করেনযার সাধুবাদ  হিসেবে তিনি পান সারা ভারতের গভর্নর জেনারেলের পদদেশীয় নেতাদের সহযোগিতায় রাজা চৈত সিংয়ের বাড়িতে বিশেষ করে তাঁদের মহিলাদের উপর অশ্লীল ও সীমাহীন অত্যাচার করেছিলেন তিনিআর অযোধ্যার বেগম ও তাঁর বাড়ির মহিলাদের প্রতিও যথেচ্ছ অত্যাচার করে তিনি চমক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সরকারকেতাঁর সময়ে ভারতে সুপ্রীম কোর্ট ও চিফ জাস্টিসের পদ গঠিত হয়এঁর সময়েই তৈরী হয়েছিল এসিয়াটিক সোসাইটিযাই হোক, হেস্টিংসের আমলেই মুদ্রণ যন্ত্রেরও প্রচলন হয় এই দেশেমূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় ভাষায় খৃষ্টান ধর্মের প্রচার ও প্রভাব সৃষ্টি করাএত করেও হেস্টিংসের দুর্নামে সোচ্চার হয়ে উঠলো ভারতবর্ষসদাশয় ইংরেজ সরকার সুবিচারের নামে তাঁকে সসম্মানে ইংলণ্ডে ডেকে নিয়ে আরম্ভ করলো তাঁর অত্যাচারের বিচারবৃটিশের মহামান্য বিচারকদের সুবিচারে তিনি প্রমাণিত হলেন একেবারে নির্দোষতাঁর মৃত্যু হয় ১৮১৮-তে

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

লর্ড ক্লাইভ [Lord clive]


১৭২৫ এ জন্মগ্রহণ করেনতাঁকে ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ১৭৪২ সালে বিলেত থেকে তাঁকে মাদ্রাজে পাঠানো হয়েছিল১৭৪৮-এ সৈন্য বিভাগের কর্মচারি হয়েছিলেন তিনিসেই সময় ভারতে ফরাসিদেরও প্রভাব ছিল যথেষ্টইংরেজ ও ফরাসিদের মূল লক্ষ্য ছিল একইআর্কটের মুসলিম নবাবের মৃত্যু হলে ফরাসীরা প্রতিনিধি বানান চাঁদ সাহেবকে, অন্যদিকে ইংরেজদের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন মহম্মদ আলীএঁদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড লড়াইমিঃ ক্লাইভ মহম্মদ আলীর পক্ষে লড়তে বৃটিশ সৈন্য নিয়ে আর্কটে আক্রমণ করে ফরাসিদেরকে পরাজিত করলেন ভারতে ফ্রান্সের রাজনৈতিক পতন শুরু ওখানেই আর্কটবাসী মনে করলেন মুসলমান নবাবের আর্কট ইংলন্ডের হাতেই চলে গেল সারা ভারতের রাজনৈতিক নেতারাও ভাবছিলেন ঐ এক-ই কথাচতুর ক্লাইভ আর্কট দখল করে মহম্মদ আলীকে সিংহাসনে বসিয়ে চমক লাগিয়ে অবাক করেন সবাইকেবিশেষ করে ভারতের মুসলিম জাতি ক্লাইভের উদারতায় অভিভূত হয়ে গিয়েছিল তখন কারও পক্ষে এই কৌশল টের করা সম্ভব হয়নিএরপরে আর কিছু ক্ষেত্রে ক্লাইভ ফরাসিদের পরাজিত করে ফ্রান্সের স্বপ্নকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দেনএইবার ক্লাইভ বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার দিকে নজর দিলেন তিনি ঘাঁটি গাড়লেন চন্দনগরেসময়টা ঠিক এমন ছিল যখন সিরাজকে পদচ্যুত করার  বড় রকমের একট ষড়যন্ত্র চলছিলএই দুর্যোগকে ক্লাইভ সুযোগ মনে করে ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়ে দিলেন সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তারা হচ্ছেন রাজা কৃষ্ণচন্ত্র, ধনকুবের জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রাধাবল্লভ, উর্মিচাঁদ, গোবিন্দসিংহ, নন্দনকুমার প্রভৃতি নেতৃবৃন্দআর মুসলমান নেতাদের মধ্যে ছিল মীর জাফর আলী ও ইয়ার লতিফসামরিক ক্ষমতার জোরে ক্লাইভ সিরাজকে পরাজিত করতে পারবেন না তা ভালই জানতেন তিনিকারণ পূর্বের কলকাতার যুদ্ধে সিরাজের জয়লাভ এবং ইংরেজদের পরাজয়ের বা সেই আলি নগরের সন্ধির কথা তাঁর স্মরণ ছিলসুতরাং ষড়যন্ত্র ছাড়া সিরাজকে পরাজিত করা যাবে না ভেবেই পূর্বে উল্লিখিত বঙ্গীয় নেতাদের সঙ্গে শর্ত দেয়া নেয়ার কাজ শেষ করে ফেললেন অর্থাৎ সিরাজের পদচ্যুতির পর কাকে কী দেওয়া হবে, কে কীভাবে কী পরিমাণ লাভবান হবেন সব জানিয়ে দেওয়া হল তাঁদের১৮৫৭ সালের ২৩শে জুলাই পলাশীতে যে যুদ্ধ[?] হয়েছিল সেটা ছিল একটা পুতুলখেলা মাত্রপৃথিবীর ইতিহাসের প্রচারের জোরে এটাকে বিশ্বের বিরাট যুদ্ধ বলে চালালেও তা ছিল ভাঁওতা, কারণ সিরাজের সৈন্য যেখানে এক লাখের উপর আর সেই পরিমাণ কামান গোলাবারুদ, ক্লাইভ সেখানে হাজির হচ্ছেন মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়েক্লাইভ হলেন বিজয়ী আর ভারত প্রতিনিধি সিরাজউদ্দৌলা হলেন বন্দীকিছুদিনের মধ্যেই নিষ্ঠুরভাবে নিহত হতে হলো সিরাজকে আর ইংলণ্ড প্রাপ্য লর্ডউপাধিতে ভূষিত করলো ক্লাইভকে সেইসঙ্গে চরম বেইমানির পরম পুরস্কার ব্যারনটাইটেলএইবার লর্ড ক্লাইভ হয়ে গেলেন সারা বাংলার গভর্নর১৭৬৭ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উন্নতির গতি এত সুক্ষ্ম ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চলতে লাগলো যে সাধারণ মানুষ টের করতে পারেনি ভারত স্বদেশীর হাত থেকে চলে গেছে বিদেশীর হাতেশান্ত অনুগত তাবেদের সেজে ১৭৬৫-তে দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের দরবারে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টকা কর দেবার চুক্তিতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী পদ আদায় করলো বৃটিশক্রমে মুসলিম রাজত্ব গতি নেয় ধ্বংসের দিকে আর ইংরেজরাজ প্রতিষ্ঠার গতি বৃদ্ধি হতে থাকে দ্রুত ক্লাইভ ইংলন্ডবাসীর পক্ষে মহান মানুষ হলেও নিরপেক্ষ বিশ্ববাসীর চোখে তিনি ছিলেন একজন বড় শোষক ধাপ্পাবাজ ও লুণ্ঠকতিনিই হচ্ছেন ভারতের অর্থনৈতিক পতনের মূল আসামীপূর্বে বর্ণিত বঙ্গীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, নাকি ক্লাইভের তৈরি ষড়যন্ত্রে ঐ নেতারা যোগ দিয়েছিলেন তা খানিকটা বিতর্কিত ব্যাপারতবে উল্লিখিত ভারতীয় নেতারা প্রত্যেকেই যে নিজের নিজের অর্থনৈতিক পার্থিব স্বার্থে ভারতবর্ষকে বৃটিশের হাতে বিক্রি করার রাস্তা খুলে গেছেন, এ বিষয়ে সবাই একমতনিহত সিরাজের বাড়ি লুঠ করে প্রত্যেক লুণ্ঠকই ভালরকম নগদ মালকড়ি পেয়ে তৃপ্ত হয়েছিলেনতবে একথা সত্য যে ভারতীয় বেইমান দালাল নেতারা যা পেয়েছিলেন তার চেয়ে বহু বেশি ধনরত্ন অর্থ পেয়েছিলেন বৃটিশ নেতারানিরপেক্ষ বিচারে ভারতীয় নেতাদের প্রাপ্তিযোগ সাময়িকভাবে হলেও তারা তা বিদেশে নিয়ে চলে যাননি, কিন্তু বিদেশিরা যা পেয়েছিলেন তার সবটুকুই নিয়ে চলে গিয়েছিলেন স্বদেশ ইংলন্ডেক্লাইভ সেই বাজারে পেয়েছিলেন দু লক্ষ আশি হাজার টাকা আর মীরজাফর ক্লাইভকে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এক লক্ষ ষাট হাজার টাকাতাছাড়া মেম্বার হিসেবে ক্লাইভ আরো দু লাখ টাকা পেয়েছিলেন আর সেনাপতির যোগ্যতা ও ষড়যন্ত্রের পুরস্কার বাবদ বিশিষ্ট দান পেয়েছিলেন আরো এক লাখ ষাট হাজারএগুলো সব প্রকাশ্য প্রাপ্তিকিন্তু গোপনে যা পেয়েছিলেন তার পরিমাণ সঠিকভাবে বলা মুশকিলতবে যখন তিনি ইংলন্ড চলে গিয়েছিলেন তখন তাঁর মালপত্র জাহাজে ওঠাবার সময় যা দেখা গেছে তা হলো- ধনরত্ন, মণি মানিক্য, সোনা ও রূপোর জিনিষপত্রের জন্য বড় সাইজের ত্রিশটি নৌকা ভর্তি সামগ্রীসেই বিখ্যাত লর্ড ব্যারন কর্ণেল ক্লাইভ দেশে ফিরে গিয়ে হলেন এক বিরাট মামলার আসামী- অপরাধটা শোষণের নয়, যা এনেছিলেন তার থেকে বৃটিশ সরকারকে যা দেবার কথা ছিল তা তিনি দেননি যথাযথ আসামী হওয়ার অপমানে ও ক্ষোভে এই বীর[?] নেতা ১৭৭৪ খৃষ্টাব্দে আত্মহত্যা করেন

স্যার জন অ্যান্সট্রুদার [Sir Jhon Anstruther]

স্যার জন অ্যান্সট্রুদার [Sir Jhon Anstruther] জন্ম ১৭৫৩ তে। এই সাহেব ছিলেন ইংরেজদের দৃষ্টিতে একজন বড়মাপের বুদ্ধিজীবী। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে ভূষিত করা হয়েছিল তাকে। তিনিও বিচারের নামে ইংরেজ সরকারের অনুকূলেই তাঁর কর্তব্য যথাযথ পালন করে যেতেন তিনি । ওয়ারেন হেস্টিংসের মামলার সময় তিনি ছিলেন একজন এসেসর। পার্লামেন্টের সদস্যও হতে পেরেছিলেন তিনি। কলকাতা হাইককোর্টে তাঁর একটি প্রতিমূর্তি আছে। তিনিও ‘স্যার’ উপাধিপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তিত্ব।

লর্ড মিন্টো [Lord Minto]

লর্ড মিন্টো [Lord Minto]এই খলনায়কের জন্ম হয় ১৭৫১ খৃষ্টাব্দে। ১৮০৭ হতে ১৮১৩ পর্যন্ত তিনি ভারতের বড়লাট হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন । জর্জ এলিয়ট হচ্ছে তাঁর প্রকৃত নাম । ওলন্দাজের অধীনে থাকা জাভা দ্বীপের বার্টাভিয়া শহর দখল করেন লর্ড মিন্টো। এমনকি তিনি অধিকার করতে সক্ষম হলেন কালঞ্জর দূর্গ। বুন্দেলখণ্ডে শান্তিস্থাপনের অভিনয় করে শিখরাজা রনজিৎ সিং এর সঙ্গে সন্ধি করেন তিনি। কিন্তু শিখরা বুঝতে পারেন যে ওটা সন্ধি ছিল না বরং ছিল দূরভিসন্ধি। কোল্হাপুর ও সামন্তবাড়ীর রাজাদের দস্যু সাজিয়ে দস্যু দমনের নাম করে ক্ষমতা চূর্ণ বিচুর্ণ করে দমন করেন তাদের। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকে তাঁর সময়ে নতুন সনদ বা অধিকার প্রদান করা হয়। দেশীয় ভারতীয়দের লেখাপড়া শেখাবার জন্য কোম্পানির পক্ষ হতে এক লাখ টাকা দান, আর খৃষ্টান মিশনারী বা ধর্ম প্রচারকদের সরকারিভাবে সারা ভারতে বিনা বাধায় বা বিনা দ্বিধায় ধর্মপ্রচার মিন্টোর মূল্যবান অবদান। ইংরেজ সরকার তাঁকে লর্ড উপাধি দিতে কার্পণ্য করেননি। ১৮১৪ খৃষ্টাব্দে হয়েছিল তাঁর প্রাণবিয়োগ।

হ্যালহেড [Halhed]

১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন জাতিগতভাবে একজন ইংরেজ। বাংলায় ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। প্রথমে তিনি বাংলা ভাষায় অনেকগুলো পুস্তক পুস্তিকা রচনা করতে সক্ষম হন। তাছাড়া একটি বাংলা ব্যাকরণ লিখেও নজির সৃষ্টি করেন তিনি। হুগলীতে স্থাপনা করেন একটা ছাপখানাও। তাঁর সৃষ্টি করা পুঁথি এবং এদেশের-ই সংগ্রহ করা পুঁথি সবই চালিয়েছেন প্রাচীন পুঁথি বলে। সেগুলো প্রচারের প্রাবল্যে এবং ক্রীত দালালদের দালালিতে মূল্যবান দলিল রূপে সমাদৃত হয়ে বৃটিশ মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে যাতে যুগযুগ ধরে আগামী প্রজণ্মকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো যায়। এই নিপুণ নায়কের মৃত্যু ঘটে ১৮৩০-এ।

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

স্যার চার্লস উইলকিন্স [Sir Charles Wilkins]

স্যার চার্লস উইলকিন্স [Sir Charles Wilkins]। তিনি খ্রিষ্টাব্দ ১৭৫০ এ জন্মগ্রহণ করেন।১৮৩৮ এ হয় তার পরলোক যাত্রা। ইনি ২০ বছর বয়সে বিলেত থেকে ভারতে আসেন । অর্থাৎ ১৭৭০ খৃষ্টাব্দে। তিনি সফল ও সক্ষম হয়েছিলেন ইংরেজদের মধ্যে সংস্কৃত শিক্ষার একটা বিশেষ ষড়যন্ত্র করতে । তিনি একথা রটাতে থাকেন যে, তাঁরাই নাকি উদ্ধার করেছেন আসল ‘দুর্লভ গীতা’। ১৭৮৫ তে ইংলণ্ডে প্রথম ছাপা হয় তাঁর ইংরাজী অনুবাদ। ভারতের নব্যদল এতে অবাক হয়- গীতা এমন এক দামী গ্রন্থ যা কুড়িয়ে পাওয়া হীরের মত। আর তা ইংলণ্ডে গিয়ে হাজির! আমরা তার মর্যাদাই বুঝলাম না। সুতরাং গীতা পড়বার বা জানবার একটা পিপাসা সৃষ্টি করতে বৃটিশ সরকার সক্ষম হয় ভালভাবে । স্যার উইলকিন্স ১৭৭৯ খৃষ্টাব্দে সৃষ্টি করেন সংস্কৃত ব্যাকরণ। কিন্তু ব্যাকরণটা যদিও ‘ব্যাকরণ’ হয়নি তবুও ব্যাকরণ রচনা হয়েছে- এটাই একটা নতুন পদক্ষেপ। বাংলা ও পার্শী ভাষায় টাইপ তৈরি করেছিলেন। একটি গবেষণাগার তৈরির প্রয়োজন হয় যাতে থাকবে অনেক বই পুস্তক, মুদ্রা, পুঁথি প্রভৃতি আর প্রত্নত্ত্বের তথ্য। সেইজন্য ভারতের কলকাতায় তৈরি হয় ‘ এশিয়াটিক সোসাইটি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। যেটি পূর্বেই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন বিচারপতি স্যার্ জোনস ১৭৮৪-তে। এইসব প্রচারের জন্য একটি পত্রিকা প্রয়োজন হয় । তাই ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ নামে একটি পত্রিকারও সৃষ্টি হয়ে গেল সহজেই। ১৭৮৬ তে তাঁর দায়িত্ব পালন করে স্বদেশে ফিরে গেলেন তিনি। দেশে ফিরে একদল ইংরেজ পণ্ডিত নিয়ে ২২ বছর গবেষণা করে প্রকাশ করলেন আবার একটি সংস্কৃত ব্যাকরণ। দেখা গেল প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাকরণের মধ্যে কোন মিল নেই!

শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

মিঃ ময়রা [mr moira]

মিঃ ময়রা [mr moira] এই মহান সাহেব ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন ১৭৫৪ তে। তিনি ১৮১৩ থেকে ১৮২৩ পর্যন্ত দশ বছর ভারতের বড়লাট ছিলেন। কলাকৌশল বা ছলনার মাধ্যমে গোর্খাজাতির মধ্যে ঢুকতে সক্ষম হন তিনি।এবং ক্রমে ক্রমে চক্রান্ত করে তাদেরকেই আবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেন তিনি। গোর্খারা ইংরেজদের হিংস্র থাবার আঘাতে পরাজিত হয় মর্মান্তিকভাবে। ইংল্যান্ড সরকার তার প্রতি খুশি হন। যার ফলে তাকে ভূষিত করা হল মারক্যুইস অব হেস্টিংস[Murcuis of Hestings]নামকরণের মাধ্যমে। ইংরেজদের ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য অবদান হল নেপাল যুদ্ধ, পিন্ডারীদের নিষ্ঠুর ভাবে দমন এবং মারাঠা যুদ্ধে মারাঠাদের সর্বনাশ সাধন ইত্যাদি। মোটকথা ইংরেজ রাজত্ব কায়েম করার দিকে অনেকটাই সাহস জুগিয়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যু ঘটে ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে।

শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

স্যার অকটোরলোনি [sir Ochterlony]

স্যার অকটোরলোনি [sir Ochterlony] তিনি জন্মেছিলেন ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে পরলোকগমন করেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সেনাপতি। লর্ডওয়েলেসলির সময় তিনি ছিলেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট কর্ণেল। ১৮০৪ এ তিনি পরাজিত করেছিলেন হোল্কারকে। ১৮১৫ তে নেপালী সেনাপতি অমর সিংহকে পরাজিত করে সন্ধি করতে বাধ্য করেছিলেন তাকে। কলকাতা গড়ের মাঠে মনুমেন্টটি তারই নামের সাক্ষী।


উইলিয়াম পিট [william pit]


উইলিয়াম পিট [william pit] এর জন্ম ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আর ১৮০৬ এ হয় এর পরলোক গমন। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বুদ্ধিমান ও প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি। ২৪ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংল্যান্ড প্রশাসনের হাতে নিয়ে আসার।

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

ফ্রাসোয়া বার্নিয়ের


এর বাড়ি ছিল ফ্রান্সের মঞ্জু প্রদেশের জই নামক স্থানে। তার জন্ম ১৬২০ খৃষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন বিখ্যাত চিকিৎসক। খুব ভালভাবে ডাক্তারি পাশ করার পর তাকে স্থায়ীভাবে কোন জায়গায় ডাক্তারি করতে না দিয়ে পর্যটকের ভূমিকায় সমগ্র ইউরোপ এবং মিসর,তুরস্ক, সিরিয়া প্রভৃতি মুসলিম দেশ ঘুরিয়ে ১৬৫৮ তে সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে পাঠানো হয় ভারতবর্ষে। মিঃ বার্নিয়ের বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও কার ইঙ্গিতে তিনি এতগুলো দেশ, বিশেষত মুসলিম দেশে পর্যটন করলেন এবং কেনই বা তিনি সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বে ভারতবর্ষে এলেন তার কারণ, আধুনিক গবেষকরা মনে করেন যে, ভারত আক্রমণ করলে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো ভারতের পক্ষে থাকবে কি বিপক্ষে অথবা থাকবে নিরপেক্ষ তা দেখার জন্যই ছিল তার ঐ ভ্রমণকার্জ। শাহজাহান ছিলেন ধার্মিক লোক। অতএব বিলেতি সুরা আর বিদেশি সুন্দরী দিয়ে তাকে যে মুগ্ধ করা যাবেনা এটা বিলেতি রাজনীতিজ্ঞরা জানতেন ভালকরে। ভাগ্য প্রসন্ন হোল। যে মুহুর্তের প্রতীক্ষা করছিলেন বার্নিয়ের, তা পেয়ে গেলেন তিনি। বাদশার জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকো ছিলেন বিলাসী। আহমেদাবাদে রাজকুমার দারার সঙ্গে বার্নিয়ের দেখা করেন এবং তার স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসার গ্যারান্টি দেন তিনি। তার চিকিৎসায় রাজকুমারের স্ত্রী কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। সেই জন্যই প্রিন্স দারা তাকে পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে বরণ করে তাকে বিশেষ এক অনুমতিপত্র দেন। যার বলে তিনি রাতে দিনে রোগী দেখার নাম করে দিল্লির রাজদরবারে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যান অবাধে।
সবচে যেটা মজার কথা, তিনি কোন পারিশ্রমিকই নিতেন না। তিনি নাকি ছিলেন নির্লোভ। তবে যে বিষয়ে লোভ ছিল সেটা হল, রাজদরবারের বালক-বালিকা থেকে প্রত্যেক মহিলার সঙ্গে চিকিৎসার নামে আলাপ করা এবং ভিতরের কথা বের করে নেওয়া। দারাকে তিনি প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে সম্রাটের মৃত্যুর পর প্রথম সম্রাট হতে পারেন তিনিই। তাতে বার্নিয়ের স্বার্থ ছিল নতুন যুবক রাজাকে হাতে করে ভারতবর্ষে প্রভাব বিস্তার। তাকে আকবরের অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। একটি নতুন ধর্ম তৈরি করতে আকবরের মত দারাশিকোকেও ‘মাজমাউল বাহরাইন’ যে বই লিখেছিলেন এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উপনিষদের যে অনুবাদ তিনি করেছিলেন অথবা করিয়েছিলন সেসব ছিল বিলেতি মস্তিষ্কপ্রসূত কৌশল। বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের আলোচনা পরে করা হবে বিশেষভাবে।

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১২

মিঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ [Lord Cornwallis]


জন্মগ্রহণ করেন ১৭৩৮ সালে। ভারতের গভর্নর জেনারেল হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন ১৭৮৬তে। ১৭৯৩ এ তিনি করেছিলেন ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ প্রথার প্রচলন। ঐ সর্বনাশী প্রথা জমির প্রকৃত মালিককে বঞ্চিত করে নিষ্ঠুরভাবে তার পরিবর্তে জমির নতুন মালিক হয়ে বসেন রাজা মহারাজা বাবু সমাজের বিরাট এক সুবিধাভোগী দল। তার শাসনকালেই হয়েছিল মহীশুর যুদ্ধ। বুদ্ধি ও যোগ্যতায় তিনি আর একবার ভারতের গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন ১৮০৪ সালে। ১৮০৫ খ্রিস্তাব্দে হয়েছিল তার পরলোকগমন।

মিঃ এডোয়ার্ড গিবন [ Edward Gibbon]

১৭৩৭ সালে জন্মেছিলেন এবং মৃত্যু হিয়েছিল ১৭৯৪ এ। ইংরেজ সরকেরকে তাদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি ঐতিহেসিক শ্রেণী সৃষ্টি করতে হয়েছিল এবং কর্মকান্ড এমন ছিল যেন তারাই নিয়েছিল সারা পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস লেখার এজেন্সি। ইনিও ইংরেজ প্রচারিত সেইরকম একজন বড়মাপের ঐতিহাসিক। তার সৃষ্ট অনেক ইতিহাসের মধ্যে যেটাকে বিশ্ববিখ্যাত বলে চালেনো হয় সেটা হচ্ছে-Decline and fall of the Roman Empire।

মিঃ ক্লেভারিং [Clavering]

জন্মগ্রহন করেন ১৭২২ খৃষ্টাব্দে এবং ১৭৭৭এ পরলোকগমন করেন। তিনি ছিলেন একজন সামরিক কর্মী। সারা বাংলার সৈন্য বিভাগটি যখন তার দায়িত্বে ছিল তখন ছিল ১৭৭৪ সাল। তিনি ছিলেন মিঃ ওয়ারেন হেস্টিংসের মন্ত্রীসভার সদস্য। তার সমস্ত মতামতে ক্লেভারিং একমত হতে পারতেন না। সুতরাং বাংলার এতবড় সামরিক নেতা হয়েও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। সেই কারণেই ‘স্যার’ ‘লর্ড’ ইত্যাদি চটকদার উপাধিও জোটেনি তার ভাগ্যে।

মিঃ ডুপ্লে [joseph francois Dupleix]

ভারতবর্ষ নামক যে মৌচাকটিতে শুধু ইংল্যন্ডের মধুকরেরাই আসেনি,ফরাসী যেসব মধুকর এসেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম মিঃ ডুপ্লে। ১৬৯৭ এ তার জন্ম এবং মৃত্যু ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে। ১৭১৫ তে ভারতে এসে ১৭২০ তে পন্ডিচেরি কাউন্সেলের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ভারতে আরো প্রভাব ফেলতে তিনি প্রচন্ড বাঁধা পেলেন ইংরেজ ক্লাইভ তথা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে। শেষ পর্যন্ত ক্লাইভের জয় হয় আর খর্বিত হয় ক্লাইভের প্রভাব।

সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১২

জব চার্নব

১৬৫৫ এর পরে জব চার্নবকে বিলেত থেকে পাঠানো হয় ভারতে। কাশিমবাজার কুঠির অধ্যক্ষ হন তিনি। নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের বিবাদ শুরু হলে কোন ইঙ্গিতে বা কোন পরিকল্পনায় তিনি কাশিমবাজার থেকে চলে এলেন ২৪পরগনার বরিশা। ওখানকার জমিদার ছিলেন সাবর্ণ চৌধুরী। জমিদারদের সঙ্গে ব্রিটিশদের আঁতাত কেমন ছিল সে আলোচনা হবে পরে। ঐ চৌধুরী মশাইয়ের কাছ থেকে ‘কালিকোঠা বা কালীঘাট,গোবিন্দপুর ও সুতানুটি’ এই তিনটি গ্রাম কিনে নিয়ে কলকাতা নগরীর পত্তন করেন তিনি। তখন আমাদের দেশের কেউই আঁচ করতে পারেননি যে এই কলকাতা একদিন হবে ব্রিটিশের প্রধান ঘাঁটি- রাজধানী দিল্লি থেকে উঠে আসবে এই কলকাতাতেই। মুর্শিদাবাদের টাকশালও উঠে এসেছিল এখানেই।এই বিচক্ষণ ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৬৯২ খৃষ্টাব্দে।

মিঃ তাভারনিয়েরও

তিনি ছিলেন একজন খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক। তার জন্মভূমি ফ্রান্স। অন্যদিকে তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসাদার। ইংল্যন্ডের রাজনীতিবিদরা তাকে বিশেষ এক দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন ভারতে। দায়িত্বটি ছিল মুঘল দরবারের অন্দরমহলের খুঁটিনাটি সংবাদ সংগ্রহ। তিনি ঐ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ঐ সব সংগ্রহ করা তথ্যকে কেন্দ্র করে অতথ্য,অসত্য, মিথ্যা মিশ্রিত করে সৃষ্টি করেছিলেন একটি ইতিহাসের। সেটাকে তার ভ্রমণকাহিনী বলে চালানো হয়েছে, আর তা ইউরোপের প্রায় প্রত্যেক ভাষাতে মুদ্রিত হয়েছে সগৌরবে। তার জন্ম সাল ছিল ১৬০৫ আর মৃত্যু হয় ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে।

টমাস রো

তিনি ছিলেন একজন ইংরেজ রাজনীতিজ্ঞ। তিনি ইংল্যন্ডের রাজা জেমসের দূত হিসেবে ১৬১৬ খৃষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় উপস্থিত হন। তাহার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সুবিধাজনক শর্তে বাংলা ও অন্যান্য স্থানে বাণিজ্য করিতে অনুমোদন দেন।
টমাস রো ইংল্যন্ডের পক্ষ থেকে নানা উপঢৌকন নিয়ে জাহাঙ্গীরের দরবারে উপস্থিত হন। টমাস আনুগত্য, ভক্তি, প্রীতি আর অনুনয়ের যে অভিনয় করেছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন তিনি। উপঢৌকনের মধ্যে ছিল দামী দামী মণিমুক্তোর মালাসহ চিত্তাকর্ষক নানারকমের গহনা, কিছু মুল্যবান পাথর যেগুলো গহনা বা মুকুটে ব্যবহারের উপযুক্ত। সাধারণ দরিদ্র মৃত সৈনিকের বিধবা স্ত্রী নুরজাহান একনজরেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন টমাসের বেশির ভাগ নৈবেদ্য। জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করানোর মত উপহার ছিল বিলেতি সুরা আর নেচে গেয়ে মুগ্ধ করতে পারে এমন সঙ্গীতজ্ঞ বেশ কিছু বিদেশি সুন্দরী। দিল্লির দরবার সেদিন ঠিক করতে পারেনি ঐ সুন্দরীদের আসল পরিচয়। সুন্দরীদের প্রত্যেকেই ছিল জটিল রাজনীতিতে শিক্ষণপ্রাপ্ত, সচেতন ও স্বদেশপ্রেমিকা। সুতরাং চিত্তবিনোদন ও ফুর্তির চরম ও পরম মুহূর্তে তারা নানা কায়দায় বাদশার হাতের পাঞ্জার ছাপ আদায় করতো অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের ইচ্ছামত সুবিধাগুলো অনুমোদন করিয়ে নিতে পেরেছিল সহজেই। জাহাঙ্গীরের পক্ষ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইচ্ছাধীন শর্তে ভারতের ভিবিন্ন স্থানে বিশেষতঃ অভিবক্ত বাংলায় বাণিজ্য করার অধিকার ইংরেজরা পেয়ে গিয়েছিল অনায়াসে। বাণিজ্য করার ও কুঠি স্থাপন করার অধিকারের ভবিষ্যতে কী বিবর্তিত রুপ হবে তা টের করতে পারেননি মদ্যপ জাহাঙ্গীর ও তার পথপ্রদর্শক পরম পিতৃদেব মহামতি আকবর। বাণিজ্যের কুঠি ই পরিনত হয়েছিল রাজনীতির দুর্গে। টমাস রো’র মত একজন নেতাকে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে বা তার শোষণের চক্রান্তের মূল্যায়নে তাকে ইংল্যান্ড থেকে দেওয়া হয়েছিল “স্যার” উপাধি।

রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১২

রাণী এলিজাবেথ

তিনি জন্মেছিলেন ১৫৩৩-এ। সারা জীবন তিনি অবিবাহিতা ছিলেন। সিংহাসনে বসেছিলেন ২৫ বছর বয়সে। মোট রাজত্ব করেছিলেন ৪৫ বছর। ঐ সময় ভারতে সম্রাট আকবরের রাজত্ব চলছিল। তিনি যদিও মুসলমান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্র, তবুও এক নতুন ধর্ম তৈরি করেছিলেন। যেটার নাম দিয়েছিলেন তিনি “দ্বীনি-ইলাহী”। তাথ্যিক পণ্ডিত-গণের অনেকের মতে ঐ ধর্মটি ছিল ইসলাম ধর্মের বিপরীত। কারণ মদ ও জুয়া তার ঐ ধর্মে বৈধ ছিল। তার স্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও পাঁচ হাজার পর্যন্ত পাওয়া যায়। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে রাণী ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানিকে এ দেশে বাণিজ্য করার অধিকার দেন। ১৫৯৯ এর শেষ ভাগে কয়েকজন ইংরেজ ব্যবসাদার মিলে গঠন করেছিল ঐ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি। ঐ কম্পানি কালক্রমে জয় করেছিল ভারতবর্ষ। রাজনৈতিক কারণে ১৮৫৮ তে ইংল্যন্ডের তদানীন্তন রাণী ভিক্টোরিয়া তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেন ভারতবর্ষ শাসনের অধিকার।
মুসলমান শাসকদের সময়ে বহু বিদেশি শক্তি ভারতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা। আকবর রাজপুত জাতির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক পাতিয়ে যেমন তাদেরকে বসে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি চিরকুমারী রাণী এলিজাবেথের পাঠানো বণিক কোম্পানি তথা রাণীর অনুরোধপত্র হয়ত রঙিন সপ্ন দেখিয়েছিল তাকে। তাই হয়ত বৃহত্তর স্বার্থের আশা নিয়েই ঐ বিলেতি কোম্পানিকে তিনি দিয়েছেলেন অবাধে ব্যবসা করার অনুমতি। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র জাহাঙ্গীর পিতৃরোপিত অনুপ্রবেশের বিদেশি অঙ্কুরগুলোকে আরো মাথা উঁচু করার সুযোগ করে দেন। রাণী পরলোকগমন করেন ১৬০৩ খৃষ্টাব্দে।

বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১২

সেন্ট জেভিয়ার st. xaier

১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন এবং ১৫৫২ তে পরলোক গমন করেন। তিনি ছিলেন ভারতে খ্রিষ্টান ধর্মের বিখ্যাত প্রচারক। তাকে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল ভারতবর্ষে। এখানে এসে তার দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছিলেন অর্থাৎ খ্রিষ্টানদের ভবিষ্যতের প্রসস্ত পথ তৈরি করতে বেশ কিছু মাইলস্টোন পুঁততে পেরেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডবাসী তার যোগ্যতায় খুশি হয়ে তাকে পাঠিয়ে ছিলেন চীনে। জাতি ও ধর্মের স্বার্থে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। ইংল্যান্ডের মানুষ তাকে অবতার ও পুজ্যব্যক্তি বলে শ্রদ্ধা করতে শুরু করে ১৬২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে।

আলবুকার্ক albuquerque

প্রথম মিশনারি অর্থাৎ খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক হিসেবে আলবুকার্ক ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে ।তিনিই প্রথমে ভারতকে কেমন করে খ্রিষ্টান ধর্মের আওতায় আনা যায় তার চিন্তা করেন। শুধু তাই নয়, ভারতবর্ষকে কেমন করে প্রভাবিত করে ইংল্যান্ডের সমৃদ্ধির জন্য একটি শোষণক্ষেত্রে পরিণত করা যায় চিন্তা করতে পেরেছিলেন তারও।
১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালে তার জন্ম। তিনি ভারতবর্ষের কয়েকটি স্থানে বেশ খানিকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন বলা যায়।