সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১২

টমাস রো

তিনি ছিলেন একজন ইংরেজ রাজনীতিজ্ঞ। তিনি ইংল্যন্ডের রাজা জেমসের দূত হিসেবে ১৬১৬ খৃষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় উপস্থিত হন। তাহার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সুবিধাজনক শর্তে বাংলা ও অন্যান্য স্থানে বাণিজ্য করিতে অনুমোদন দেন।
টমাস রো ইংল্যন্ডের পক্ষ থেকে নানা উপঢৌকন নিয়ে জাহাঙ্গীরের দরবারে উপস্থিত হন। টমাস আনুগত্য, ভক্তি, প্রীতি আর অনুনয়ের যে অভিনয় করেছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন তিনি। উপঢৌকনের মধ্যে ছিল দামী দামী মণিমুক্তোর মালাসহ চিত্তাকর্ষক নানারকমের গহনা, কিছু মুল্যবান পাথর যেগুলো গহনা বা মুকুটে ব্যবহারের উপযুক্ত। সাধারণ দরিদ্র মৃত সৈনিকের বিধবা স্ত্রী নুরজাহান একনজরেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন টমাসের বেশির ভাগ নৈবেদ্য। জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করানোর মত উপহার ছিল বিলেতি সুরা আর নেচে গেয়ে মুগ্ধ করতে পারে এমন সঙ্গীতজ্ঞ বেশ কিছু বিদেশি সুন্দরী। দিল্লির দরবার সেদিন ঠিক করতে পারেনি ঐ সুন্দরীদের আসল পরিচয়। সুন্দরীদের প্রত্যেকেই ছিল জটিল রাজনীতিতে শিক্ষণপ্রাপ্ত, সচেতন ও স্বদেশপ্রেমিকা। সুতরাং চিত্তবিনোদন ও ফুর্তির চরম ও পরম মুহূর্তে তারা নানা কায়দায় বাদশার হাতের পাঞ্জার ছাপ আদায় করতো অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের ইচ্ছামত সুবিধাগুলো অনুমোদন করিয়ে নিতে পেরেছিল সহজেই। জাহাঙ্গীরের পক্ষ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইচ্ছাধীন শর্তে ভারতের ভিবিন্ন স্থানে বিশেষতঃ অভিবক্ত বাংলায় বাণিজ্য করার অধিকার ইংরেজরা পেয়ে গিয়েছিল অনায়াসে। বাণিজ্য করার ও কুঠি স্থাপন করার অধিকারের ভবিষ্যতে কী বিবর্তিত রুপ হবে তা টের করতে পারেননি মদ্যপ জাহাঙ্গীর ও তার পথপ্রদর্শক পরম পিতৃদেব মহামতি আকবর। বাণিজ্যের কুঠি ই পরিনত হয়েছিল রাজনীতির দুর্গে। টমাস রো’র মত একজন নেতাকে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে বা তার শোষণের চক্রান্তের মূল্যায়নে তাকে ইংল্যান্ড থেকে দেওয়া হয়েছিল “স্যার” উপাধি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন