সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

লর্ড ক্লাইভ [Lord clive]


১৭২৫ এ জন্মগ্রহণ করেনতাঁকে ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ১৭৪২ সালে বিলেত থেকে তাঁকে মাদ্রাজে পাঠানো হয়েছিল১৭৪৮-এ সৈন্য বিভাগের কর্মচারি হয়েছিলেন তিনিসেই সময় ভারতে ফরাসিদেরও প্রভাব ছিল যথেষ্টইংরেজ ও ফরাসিদের মূল লক্ষ্য ছিল একইআর্কটের মুসলিম নবাবের মৃত্যু হলে ফরাসীরা প্রতিনিধি বানান চাঁদ সাহেবকে, অন্যদিকে ইংরেজদের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন মহম্মদ আলীএঁদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড লড়াইমিঃ ক্লাইভ মহম্মদ আলীর পক্ষে লড়তে বৃটিশ সৈন্য নিয়ে আর্কটে আক্রমণ করে ফরাসিদেরকে পরাজিত করলেন ভারতে ফ্রান্সের রাজনৈতিক পতন শুরু ওখানেই আর্কটবাসী মনে করলেন মুসলমান নবাবের আর্কট ইংলন্ডের হাতেই চলে গেল সারা ভারতের রাজনৈতিক নেতারাও ভাবছিলেন ঐ এক-ই কথাচতুর ক্লাইভ আর্কট দখল করে মহম্মদ আলীকে সিংহাসনে বসিয়ে চমক লাগিয়ে অবাক করেন সবাইকেবিশেষ করে ভারতের মুসলিম জাতি ক্লাইভের উদারতায় অভিভূত হয়ে গিয়েছিল তখন কারও পক্ষে এই কৌশল টের করা সম্ভব হয়নিএরপরে আর কিছু ক্ষেত্রে ক্লাইভ ফরাসিদের পরাজিত করে ফ্রান্সের স্বপ্নকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দেনএইবার ক্লাইভ বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার দিকে নজর দিলেন তিনি ঘাঁটি গাড়লেন চন্দনগরেসময়টা ঠিক এমন ছিল যখন সিরাজকে পদচ্যুত করার  বড় রকমের একট ষড়যন্ত্র চলছিলএই দুর্যোগকে ক্লাইভ সুযোগ মনে করে ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়ে দিলেন সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তারা হচ্ছেন রাজা কৃষ্ণচন্ত্র, ধনকুবের জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রাধাবল্লভ, উর্মিচাঁদ, গোবিন্দসিংহ, নন্দনকুমার প্রভৃতি নেতৃবৃন্দআর মুসলমান নেতাদের মধ্যে ছিল মীর জাফর আলী ও ইয়ার লতিফসামরিক ক্ষমতার জোরে ক্লাইভ সিরাজকে পরাজিত করতে পারবেন না তা ভালই জানতেন তিনিকারণ পূর্বের কলকাতার যুদ্ধে সিরাজের জয়লাভ এবং ইংরেজদের পরাজয়ের বা সেই আলি নগরের সন্ধির কথা তাঁর স্মরণ ছিলসুতরাং ষড়যন্ত্র ছাড়া সিরাজকে পরাজিত করা যাবে না ভেবেই পূর্বে উল্লিখিত বঙ্গীয় নেতাদের সঙ্গে শর্ত দেয়া নেয়ার কাজ শেষ করে ফেললেন অর্থাৎ সিরাজের পদচ্যুতির পর কাকে কী দেওয়া হবে, কে কীভাবে কী পরিমাণ লাভবান হবেন সব জানিয়ে দেওয়া হল তাঁদের১৮৫৭ সালের ২৩শে জুলাই পলাশীতে যে যুদ্ধ[?] হয়েছিল সেটা ছিল একটা পুতুলখেলা মাত্রপৃথিবীর ইতিহাসের প্রচারের জোরে এটাকে বিশ্বের বিরাট যুদ্ধ বলে চালালেও তা ছিল ভাঁওতা, কারণ সিরাজের সৈন্য যেখানে এক লাখের উপর আর সেই পরিমাণ কামান গোলাবারুদ, ক্লাইভ সেখানে হাজির হচ্ছেন মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়েক্লাইভ হলেন বিজয়ী আর ভারত প্রতিনিধি সিরাজউদ্দৌলা হলেন বন্দীকিছুদিনের মধ্যেই নিষ্ঠুরভাবে নিহত হতে হলো সিরাজকে আর ইংলণ্ড প্রাপ্য লর্ডউপাধিতে ভূষিত করলো ক্লাইভকে সেইসঙ্গে চরম বেইমানির পরম পুরস্কার ব্যারনটাইটেলএইবার লর্ড ক্লাইভ হয়ে গেলেন সারা বাংলার গভর্নর১৭৬৭ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উন্নতির গতি এত সুক্ষ্ম ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চলতে লাগলো যে সাধারণ মানুষ টের করতে পারেনি ভারত স্বদেশীর হাত থেকে চলে গেছে বিদেশীর হাতেশান্ত অনুগত তাবেদের সেজে ১৭৬৫-তে দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের দরবারে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টকা কর দেবার চুক্তিতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী পদ আদায় করলো বৃটিশক্রমে মুসলিম রাজত্ব গতি নেয় ধ্বংসের দিকে আর ইংরেজরাজ প্রতিষ্ঠার গতি বৃদ্ধি হতে থাকে দ্রুত ক্লাইভ ইংলন্ডবাসীর পক্ষে মহান মানুষ হলেও নিরপেক্ষ বিশ্ববাসীর চোখে তিনি ছিলেন একজন বড় শোষক ধাপ্পাবাজ ও লুণ্ঠকতিনিই হচ্ছেন ভারতের অর্থনৈতিক পতনের মূল আসামীপূর্বে বর্ণিত বঙ্গীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, নাকি ক্লাইভের তৈরি ষড়যন্ত্রে ঐ নেতারা যোগ দিয়েছিলেন তা খানিকটা বিতর্কিত ব্যাপারতবে উল্লিখিত ভারতীয় নেতারা প্রত্যেকেই যে নিজের নিজের অর্থনৈতিক পার্থিব স্বার্থে ভারতবর্ষকে বৃটিশের হাতে বিক্রি করার রাস্তা খুলে গেছেন, এ বিষয়ে সবাই একমতনিহত সিরাজের বাড়ি লুঠ করে প্রত্যেক লুণ্ঠকই ভালরকম নগদ মালকড়ি পেয়ে তৃপ্ত হয়েছিলেনতবে একথা সত্য যে ভারতীয় বেইমান দালাল নেতারা যা পেয়েছিলেন তার চেয়ে বহু বেশি ধনরত্ন অর্থ পেয়েছিলেন বৃটিশ নেতারানিরপেক্ষ বিচারে ভারতীয় নেতাদের প্রাপ্তিযোগ সাময়িকভাবে হলেও তারা তা বিদেশে নিয়ে চলে যাননি, কিন্তু বিদেশিরা যা পেয়েছিলেন তার সবটুকুই নিয়ে চলে গিয়েছিলেন স্বদেশ ইংলন্ডেক্লাইভ সেই বাজারে পেয়েছিলেন দু লক্ষ আশি হাজার টাকা আর মীরজাফর ক্লাইভকে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এক লক্ষ ষাট হাজার টাকাতাছাড়া মেম্বার হিসেবে ক্লাইভ আরো দু লাখ টাকা পেয়েছিলেন আর সেনাপতির যোগ্যতা ও ষড়যন্ত্রের পুরস্কার বাবদ বিশিষ্ট দান পেয়েছিলেন আরো এক লাখ ষাট হাজারএগুলো সব প্রকাশ্য প্রাপ্তিকিন্তু গোপনে যা পেয়েছিলেন তার পরিমাণ সঠিকভাবে বলা মুশকিলতবে যখন তিনি ইংলন্ড চলে গিয়েছিলেন তখন তাঁর মালপত্র জাহাজে ওঠাবার সময় যা দেখা গেছে তা হলো- ধনরত্ন, মণি মানিক্য, সোনা ও রূপোর জিনিষপত্রের জন্য বড় সাইজের ত্রিশটি নৌকা ভর্তি সামগ্রীসেই বিখ্যাত লর্ড ব্যারন কর্ণেল ক্লাইভ দেশে ফিরে গিয়ে হলেন এক বিরাট মামলার আসামী- অপরাধটা শোষণের নয়, যা এনেছিলেন তার থেকে বৃটিশ সরকারকে যা দেবার কথা ছিল তা তিনি দেননি যথাযথ আসামী হওয়ার অপমানে ও ক্ষোভে এই বীর[?] নেতা ১৭৭৪ খৃষ্টাব্দে আত্মহত্যা করেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন